শীতলপাটির ব্যবসা
কুটিরশিল্পের এক অনন্য ঐতিহ্য রঙিন বেতির বুননে তৈরি শীতলপাটি। গ্রীষ্মের তীব্র গরমে এর বেশ কদর রয়েছে। শীতলপাটির ঠাণ্ডা পরশে শ্রান্তি ও ক্লান্তি দূর হয় নিমিষে। গ্রামবাংলায় এখনও পাটি বিছিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। বর্তমানে শীতলপাটি তেমন চোখে না পড়লেও এর চাহিদা রয়েছে। তাই যারা বেকার ও যাদের আয়ের অন্য কোনো উপায় নেই, তারা এ পাটি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন। পুরুষের পাশাপাশি এ ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন নারীরাও। এতে সামান্য পুঁজি হলেই চলে।
শীতলপাটির প্রধান উপাদান মুর্তা বা মোস্তাক নামের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের ছাল। এটি থেকে বিশেষ বুননকৌশলে শিল্পরূপ ধারণ করে শীতলপাটি। নদীনালা, খালবিল, পুকুরপাড়, ডোবা ও জলাভূমিতে জšে§ এ উদ্ভিদ। অনেক সময় ধানের জমি বা কর্দমাক্ত জমিতেও এ গাছ দেখা যায়।
যা প্রয়োজন
পাটিপাতা, টিনের পাত্র, রং প্রভৃতি।
যেভাবে তৈরি করবেন
পাটিপাতা কেটে এনে বেতি বের করে তা শুকিয়ে ও পরে ভিজিয়ে শীতলপাটি তৈরির উপযোগী করা হয়। পাটি তৈরির জন্য মুর্তার ছাল বের করা হয়। একটি ছাল পাটি তৈরির জন্য প্রস্তুত করে তুলতে আলাদাভাবে সাতবার হাতে নিতে হয়। প্রথম দফায় মুর্তা থেকে চার ভাগ করে বেতি বের করা হয়। এরপর সরু করতে হয়। তুলে ফেলতে হয় সম্পূর্ণ আঁশ। তারপর বেতি আকারে সমান করতে হয়। আবার ছাল ফেলে রোদে শুকানো হয়। এরপর বেতিগুলো আরও এক ঘণ্টা পানিভর্তি টিনের পাত্রে ভিজিয়ে, গরম পানিতে সিদ্ধ করা হয়। সিদ্ধ শেষে বেতিগুলো রোদে শুকিয়ে আবার ঠাণ্ডা ও পরিষ্কার পানিতে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ভিজিয়ে ধুয়ে তোলা হয়। এভাবে মুর্তা বেতি পাটি তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হয়। পাটিতে নানা রং ব্যবহার করা হয় কারুকাজের জন্য।
আয়-ব্যয়
বাজারে সাধারণত চিকন ও মোটা দুই ধরনের পাটিপাতা পাওয়া যায়। মোটা পাটিপাতার দাম তুলনামূলক কম, চিকনটি বেশি। পাতা অনুযায়ী দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। বিক্রি করা যায় ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বেতি যত চিকন ও কারুকাজ বেশি হবে, সেই পাটির দাম আরও বেশি দামে বিক্রি করা যাবে।